বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ঘুরছে করোনার বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট

চট্টগ্রামে ঘুরছে করোনার বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট

করোনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো করোনা রোগীদের মাঝে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পেয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক। যাদের মাঝে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে তারা ভারতফেরত কারও সংস্পর্শে আসেননি। গবেষকরা ধারণা করছেন, চট্টগ্রামেও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে।[ads1]

চট্টগ্রাম বিভাগের সাতটি করোনা ল্যাব ও হাসপাতাল থেকে ৮২টি নমুনা সংগ্রহ করে ৪২টির জিনোম সিকোয়েন্স করেন গবেষকরা। এই নমুনাগুলোর মধ্যে চারটি দেশের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে— যার মধ্যে দুটি নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনলজি বিভাগ ও ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবির যৌথ পরিচালনায় এই গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে।

করোনাভাইরাসের কিছু ভ্যারিয়েন্ট আবার অধিকতর ছোঁয়াচে হয়ে ওঠে— যার ফলে টিকা দিয়ে একে কাবু করা দুরূহ হয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট— যার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। এটি প্রথম ভারতে শনাক্ত হয় গত মার্চে। দেশটির ধারণা দেশে করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে এর পেছনে রয়েছে এই শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট। বাংলাদেশে গত ৮ মে প্রথম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।

এ পর্যন্ত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনটিসহ সব ভারতীয় ধরণকে ‘উদ্বেগের ধরন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ভারতীয় এ ধরনটি ৫০ শতাংশেরও বেশি সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সেরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরনকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে।

চট্টগ্রামে পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমে ১৩ সদস্যের গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-ফোরকান। এতে অন্যতম সহযোগী গবেষক হিসেবে রয়েছেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা আঁখি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সুজৎ পাল, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান। গবেষণায় অর্থায়ন করে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)।

গবেষণায় দেখা যায়, ৪২টি নমুনার মধ্যে ৩৩টি (৭৮.৫%) দক্ষিণ আফ্রিকার (বিটা ), ২টি (৪.৮%) ভারতীয় (ডেল্টা), ৩টি (৭.২%) নাইজেরিয়ায় (ইটা) এবং ৪টি (৯৫%) যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট (আলফা)।

গবেষকরা জানান, যে দুইজনের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে তারা ভারতে না গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া তারা ভারফেরত কারও সংস্পর্শেও যাননি। এদের মধ্যে একজনের বাড়ি ফটিকছড়ি এবং অন্যজন দীর্ঘদিন আগে বিদেশ থেকে এসেছেন। এদের নমুনা শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ল্যাব থেকে সংগ্রহ করা হয়।

এ বিষয়ে গবেষক দলের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনলজি বিভাগের প্রফেসর ড. লায়লা খালেদা আঁখি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম বিভাগের সাতটি ল্যাব থেকে ৮২টি নমুনা সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৪২ টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছি। এতে দুটি নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি। যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাদের মাঝে শনাক্ত হয়েছে তারা ভারতফেরত কারও সংস্পর্শে আসেননি। আমরা ধারণা করছি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আমাদেরকে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে।’

বাংলার শিরোনাম ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সর্বশেষ সংবাদ