শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

নিষিদ্ধ অ্যাপে জমজমাট জুয়া, গ্রেপ্তার ৪

নিষিদ্ধ অ্যাপে জমজমাট জুয়া, গ্রেপ্তার ৪

নিষিদ্ধ অ্যাপে জমজমাট জুয়া, গ্রেপ্তার ৪

দেশে নিষিদ্ধ অ্যাপ ‘স্ট্রিমকার’ ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া খেলা চালিয়ে আসছিল একটি চক্র। তারা সুন্দরী তরুণীদের লাইভে এনে নানা কৌশলে লোকজনকে আকৃষ্ট করত। বিন্স ও জেমস নামে দুই ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করে চলছিল এসব কার্যক্রম। এভাবে তারা বছরে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে আসছিল।[ads1]

অবশেষে এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো- জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হৃদয় ও অনামিকা সরকার। মঙ্গলবার এটিইউর কয়েকটি দল নোয়াখালীর সুধারামপুর, ঢাকার বনশ্রী ও সাভার এলাকায় এ অভিযান চালায়।

এ ব্যাপারে জানাতে বুধবার রাজধানীর বারিধারায় এটিইউর মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে এটিইউর পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্ট্রিমকার ব্যবহার করে মুদ্রা পাচার করে আসছিল। অ্যাপটিতে গ্রুপ চ্যাট, লিপ সিং, ড্যান্স, গল্প, কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন জুয়া খেলার অপশন রয়েছে। তবে বাংলাদেশে যে কোনো জুয়া ও অনলাইন প্রতারণা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। এটিইউ দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে এসব প্রতারণা ও ডিজিটাল মুদ্রা পাচার রোধে কাজ করছে। গ্রেপ্তার চারজন ও তাদের সহযোগীরা এই প্রতারণার হোতা হিসেবে কাজ করে আসছিল।[ads2]

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে নিষিদ্ধ হলেও ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) দিয়ে স্ট্রিমকার ব্যবহার করা যায়। এই অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। ইউজার বা ব্যবহারকারীর আইডি ও হোস্ট আইডি। অ্যাপ ব্যবহারকারীরা সাধারণত সুন্দরী তরুণী ও সেলিব্রেটিদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য এই প্ল্যাটফর্মে আসেন। আর হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে আইডি খোলেন সুন্দরী তরুণী ও সেলিব্রেটিরা। এতে দুই ধরনের এজেন্সি রয়েছে বিন্স ও হোস্ট। বিন্স এজেন্সিগুলো বিদেশি এই অ্যাপটির অ্যাডমিনদের কাছ থেকে বিন্স কিনে ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করে। ব্যবহারকারীরা হোস্টদের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য উপহার হিসেবে বিন্স দেন। বিন্স এক ধরনের ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। এখানে দুই ধরনের মুদ্রা রয়েছে বিন্স ও জেমস। এক লাখ বিন্সের দাম এক হাজার ৮০ টাকা এবং এক লাখ জেমসের দাম ৬০০ টাকা। তবে এক বিন্স ও এক জেমসের মান সমান। এই বিন্স হোস্টদের কাছে গেলে তা জেমস হয়ে যায়। সঞ্চিত জেমসের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে হোস্টদের আয়। তবে হোস্টদের মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেমসই যথেষ্ট নয়। তাকে প্রতিদিন ও প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময় লাইভ স্ট্রিমিংয়ে থাকতে হয়। মূলত বিন্স ও জেমসই স্ট্রিমকারের চালিকাশক্তি। দেশি বিন্স এজেন্সিগুলো সাব-এজেন্সি নিয়োগ করে। তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া তরুণীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এনে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকে। দেশে বিন্স এজেন্সি পরিচালনায় যুক্তরা নানা মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।[ads2]

এটিইউর সাইবার অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান বলেন, স্ট্রিমকারের অন্তত ১১ এজেন্ট রয়েছে বাংলাদেশে। তারাই ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচা করে। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ব্যবহারকারী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপটো কারেন্সি ও বিদেশি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা কিনছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে শতকোটির বেশি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রতারক চক্রের গ্রেপ্তার চার সদস্য ও তাদের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে সাভার থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে।

এটিইউ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার অনামিকা সরকার রাজধানীর বনশ্রীর একটি বাসা থেকে এই অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নাটোরে। পড়ালেখা করেছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। সেখানে স্ট্রিমকার জুয়ার অন্যতম প্রধান রোকন উদ্দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে পরিবারের অমতে তারা বিয়ে করেন। দেড় বছরে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। পলাতক রোকনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এদিকে স্ট্রিমকারের লক্ষাধিক ব্যবহারকারীর অনেকেই জানেন না, এ ধরনের জুয়া খেলা, ডিজিটাল মুদ্রা লেনদেন আইনত অপরাধ।

সম্পর্কিত খবর

বাংলার শিরোনাম ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সর্বশেষ সংবাদ