রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশের কারণে ঢাকার বেশকিছু সড়কের যান চলাচল বন্ধ ছিল। যেসব সড়কে যান চলাচল করেছে সেখানেও ছিল কর্মসূচিগামী বাড়তি গাড়ির চাপ। সকাল থেকে মিছিল-শোডাউন নিয়ে সমাবেশস্থলে যেতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এতেও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, নিউমার্কেটসহ অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশের এলাকায় যানজট ছিল সবচেয়ে বেশি। এছাড়া সমাবেশ ঘিরে অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সরেজমিন দেখা যায়, সমাবেশের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বসানো চেকপোস্টগুলোতে সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই তল্লাশি করা হচ্ছে। র্যাব, পুলিশ, ডিবি, সিআইডি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, রায়ট কার, এপিসি, ডগ স্কোয়াডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত সব আধুনিক সরঞ্জাম মোতায়েন রয়েছে আশপাশে। উদ্যানের আশপাশে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়। সেগুলো থেকে গতিবিধি মনিটর করা হয়। ছিল পুলিশ কন্ট্রোল রুমও। ডিএমপির সদস্য ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলার পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন। র্যাবের গোয়েন্দা দলসহ ঢাকার চারটি ব্যাটালিয়ন এবং আশপাশের র্যাব সদস্যরাও ছিলেন সতর্কাবস্থানে।
দুপুর আড়াইইটায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই যুবলীগ নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে থাকেন। যুবলীগ নেতারা বলছেন, মহাসমাবেশে দেশের ৬৪টি জেলার অন্তত ১০ লাখ নেতাকর্মী এসেছে। এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের কিছু এলাকার সড়ক বন্ধ এবং কিছু সড়ক ডাইভারশন দেওয়া হয়। এতে বিকল্প সড়কে গাড়ির বাড়তি চাপ পড়ে।
এদিকে সমাবেশের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাস সংকট দেখা দেয়। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বাস রিজার্ভ নেওয়ায় এ সংকট তৈরি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। ফলে কাছাকাছি দূরত্বে রিকশায় যেতে হয় অনেককে। আর বেশি দূরত্বে পৌঁছাতে অনেককে পিকআপ ভ্যানও ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বাস সংকটে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী ও বয়স্করা। বাস না থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা বেশি ভাড়া নেন।
মগবাজার মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষারত জাহিদুর রহমান জানান, শুক্রবার হিসাবে রাস্তা ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও সড়কে ছিল বাড়তি চাপ। বাসের জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গাড়ি চলছিল ধীরে। ছুটির দিনেও হয়রানির মধ্যে পড়তে হলো।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এরমধ্যে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের এক সংঘর্ষে নারীসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (২৪), মোহাম্মদ নাফিস (২৩), শাহিন (৪০), জিহাদ (২৪) ও সালমা বেগম (৪০)। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও পুলিশ সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের প্রায় ৪ শতাধিক বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। এ কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় হাজার হাজার যাত্রীকে। বিআরটিসির বাস ও ট্রেনে তারা যাতায়াত করেন। এসব পরিবহণে উপচে পড়া ভিড় ছিল। জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাসগুলোতে চড়ে যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মহাসমাবেশে যোগ দেন স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের অনুসারীরা।
সরেজমিন সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগরীর ২নং রেলগেট এলাকা, চাষাঢ়া, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় দেখা যায় যাত্রীদের অন্তহীন দুর্ভোগ। নগরীর ১নং রেলগেটের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও ২নং রেলগেট এলাকায় দেখা যায়, যেখানে প্রতিদিন থাকে যাত্রীবাহী বাসের লাইন আর যাত্রীদের কোলাহল, সেখানে যেন অনেকটাই বিরাজ করছিল ‘হরতাল’ পরিবেশ। অনেক যাত্রী এসে বাস না পেয়ে বাসায় ফেরত যাচ্ছেন।
রহিম শেখ নামের এক ব্যবসায়ী জানান, শুক্রবার ছুটির দিনে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় যাব আÍীয়র বাসায়। সিএনজির ভাড়া যেখানে ৫০০ টাকা সেখানে বাস না থাকায় ৮০০ টাকা চাচ্ছে। ট্রেনে যেতে চাইলাম, কিন্তু দেখলাম ট্রেনেও সরকারি দলের কর্মীতে ভরপুর। জনগণের কথা সরকারি দলের লোকজনই যদি না ভাবে তাহলে আর বিরোধী দলকে দোষ দিয়ে লাভ কি।