মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ধর্ম নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

ধর্ম নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

ধর্ম নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

ধর্ম নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

ধর্ম নিয়ে কেউ যেন আর কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে আলেম-উলামাদের ভূমিকা প্রত্যাশা করেন সরকারপ্রধান।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন।

ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই সরকার প্রতি উপজেলায় মডেল মসজিদ করছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করছি, ইসলাম ধর্ম যাতে আরও উন্নতভাবে পালন করতে পারে। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা যাতে পায়। ইসলামের মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসার যাতে ঘটে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি চাই সত্যিকারের ইসলামের চর্চা হোক। প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেই এই মডেল মসজিদ করা হয়েছে। আমাদের সমাজে আলেম-উলামাকে সবাই শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। এজন্য সমাজ থেকে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দূরীকরণে তাদের ভূমিকা জরুরি। তাদের বয়ানে মানবিক গুণগুলোর কথা যেন উঠে আসে।’
আওয়ামী লীগ সরকার ইসলাম ধর্ম ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দাওরায় হাদিসকে মাস্টার্স ডিগ্রির মর্যাদা দিয়েছে। ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে।’

মডেল মসজিদ স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলা ও জেলা সদরে মডেল মসজিদ করা হচ্ছে; যেখানে ইসলামিক মূল্যবোধের চর্চা হবে। ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বাড়বে। ইসলামি সংস্কৃতি লালন ও বিকাশের সুযোগ হবে। ইসলাম ধর্ম আরও উন্নতভাবে পালনে সুযোগ সৃষ্টি করা। ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে যেন বিপথে নিতে না পারে, প্রকৃত ধর্মের মূল্যবোধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখে মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প নিই। এর মূল লক্ষ্য মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষার সুবিধাদি সৃষ্টি, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও নারী প্রতি সহিংসতা রোধ, সরকারের উন্নয়ন বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি। ইসলামের মুল্যবোধের পরিচর্যা ও প্রসার ঘটানো।’

তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে আর কেউ যেন কোনোরকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি যেমন মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা, গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নির্যাতন, খাদ্যে ভেজাল, দুর্নীতি ইত্যাদি দূরীকরণে ইমাম ও খতিব সাহেবদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, মসজিদের বয়ান ও খুতবার শেষ সময়ে এসব বিষয় থেকে মানুষ যেন বিরত থাকে সেজন্য সচেতন করবেন। মানুষের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। নৈতিক বিষয়গুলো যেন উঠে আসে, সেদিকে নজর দেবেন।’

শিক্ষক-অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক সমাজ ও পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সবাইকে বলবো, প্রত্যেকের ছেলে-মেয়েরা যেন এসব থেকে বিরত থাকে। ছেলে-মেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে; এসব লক্ষ্য রাখবেন। ইমাম খতিবরাও বিশেষ অবদান রাখতে পারেন। আমরা চাই দেশে সত্যিকার ইসলামের জ্ঞান চর্চা হোক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি আমাদের ধর্মের সম্মানটা যেন আরও উন্নত হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সমাজ থেকে সবধরনের অন্ধকার, কুশিক্ষা অশিক্ষা, বিভেদ, হানাহানি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সমাজ থেকে দূর করে গোটা সমাজকে সুন্দর রাখতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটির ধর্মের মানুষ যেন তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে। সেই স্বধীনতা যে নিশ্চিত থাকে- সেটাই আমরা চাই। পরমত সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা যেন বজায় থাকে। দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমান অন্যান্য ধর্মের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবো। আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের মানুষের উন্নতি হবে।’

বৈশ্বিক মন্দার প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনায় বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা গিয়েছে। আমরা বাংলাদেশটা যেন তার থেকে মুক্ত থাকি সেজন্য সকলের কাছে আবেদন থাকবে, কোথাও যেন অনাবাদী জমি না থাকে। সব জায়গায় জমি আবাদ করে আমাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সম্মানের সঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। সম্মানিত জাতি হিসেবে বিশ্বের দরকারে মর্যাদা পাই।’

বক্তব্যের শেষে তিনি আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।

এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নগরকান্দা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জের সদর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের সদর ও কটিয়াদি, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সাটুরিয়া, নরসিংদীর সদর উপজেলা ও মনোহরদি, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও জেলা সদর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা, বগুড়ার ধুনট ও নন্দীগ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলা, পাবনার ভাঙ্গুরা, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা, শেরপুর সদর, পিরোজপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর ও কসবা, খাগড়াছড়ির সদর ও মানিকছড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম, খুলনার রূপসা, কুষ্টিয়ার খোকশা ও ভেড়ামারা, মেহেরপুর জেলা সদর ও গাংনী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জ জেলা সদর ও জগন্নাথপুর এবং হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার সারা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মডেল মসজিদগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ অজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়াও থাকবে হজ গমনে ইচ্ছুকদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগের আনুষ্ঠানিকতা শিক্ষণ, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং ইসলামি দাওয়াত, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র এবং মসজিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি অতিথিদের বোর্ডিং সুবিধা।

এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন সারা দেশে মোট ৫৬৪টির মধ্যে প্রথম ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়।

সম্পর্কিত খবর

বাংলার শিরোনাম ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সর্বশেষ সংবাদ