শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট অঞ্চলে যেসব শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে গেছে বা হারিয়ে গেছে, তাদের হাতে চলতি মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে বই পৌঁছে দেওয়া হবে। সোমবার (১৮ জুলাই) সিলেট সার্কিট হাউজে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা অ্যাসেসমেন্ট করেছি, কতজন শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়েছে বা হারিয়েছে। সেই অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বইগুলো নিয়ে এসে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এই মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে আমাদের সকল এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের হাতেও বই পৌঁছে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে যে লার্নিং গ্যাপটা হয়েছে, সেটা পূরণের জন্য আমরা গবেষণা করে বের করেছি যে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে। সেটার একটা পূর্ণ একটা পরিকল্পনা করে রেমেডিয়াল ক্লাসের পরিকল্পনা হয়তো আমরা এক সপ্তাহ-দশদিনের মধ্যে প্রকাশ করবো। বিশেষ করে বন্যাদুর্গত এলাকায় পরীক্ষার্থীরা একটু হয়তো পিছিয়ে পড়েছে। তবে শিক্ষকরা সহযোগিতা করলে তারাও এগিয়ে যাবে।
দীপু মনি বলেন, ১২০ বছর পর ভয়াবহ বন্যায় বহু সম্পদ রক্ষা করা যায়নি। এই বন্যার মধ্যে পড়াশোনা বন্ধ রাখতে হয়েছে। পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলকে দ্রুত উদ্যোগী হতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রমা বিজয় সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি যেন সহজ হয়
সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি যেন সহজ হয়, মসৃণ হয়। কাউকে যেন হয়রানির শিকার হতে না হয়। তিনি বলেন শিক্ষকরা অনেক পরিশ্রম করেন। পড়ানো অনেক কঠিন কাজ। যারা আমাদের মানুষ তৈরি করছেন, সেই মানুষ গড়ার কারিগরদের সম্মান যেন কোথাও ক্ষুণ্ণ না হয়। কোথাওয় হয়রানিতে পড়তে না হয়।
দীপু মনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যত্যয় দেখছি। খুবই দুঃখজনক। এসব ঘটনা শুধুমাত্র আইন দিয়ে বন্ধ করার বিষয় না। সামাজিকভাবে যেন সচেতন হই। কেউ নিগৃহীত হলে আমরা যেন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে না থাকি।
মন্ত্রী বলেন , যেকোনো অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, এমপিওভুক্তি নিয়ে অনেক রকম অভিযোগ পাওয়া যায়। একসময় বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছিল সুবিধার জন্য। কিন্তু এমপিওর ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ হয়তোবা সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি করে দিয়েছে কিনা এটাও প্রশ্ন আছে। আমরা চিন্তা করছি, হয়রানি মুক্তভাবে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজটা করা সম্ভব হয়।
ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়নি
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়নি। এটা অপপ্রচার। ধর্মশিক্ষা আগেও ছিল। এখনও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। ধর্মতো আমাদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ শেখায়। অন্যান্য বিষয়ের মতো ধর্মশিক্ষাও এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে শুধু পড়ে মুখস্ত করাই নয়, সেটাকে যেন বুঝে আত্মস্থ করে, চর্চা করে। কাজেই ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
মন্ত্রী বলেন, তারা কী আমাদের নতুন কারিকুলামের বা এই ২০২২ সালেও যে বই ছিল, সে বইগুলো কী পড়ে দেখেছেন? একটু দয়া করে পড়ে দেখবেন, তাহলে আর প্রশ্ন করতে হবে না। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অপব্যবহার করে একটা মহল, অপপ্রচার চালাচ্ছে। ধর্ম নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। আগের কারিকুলামে যা ছিল, সেগুলো বাদ দেওয়া হয়নি। এখন ধর্মের মর্মবাণীটা শুধু বোঝা না, ধর্মকে সঠিকভাবে চর্চা করা শিখতে হবে।