দেশের মধ্যভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ এবং রাত ৯টায় মূল কেন্দ্র দেশের উপকূলে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বিভিন্ন জেলায় ঝড়বৃষ্টি ও দমকা বাতাস প্রবাহিত হয়েছে।
প্রতিকূল আবহাওয়ার ফলে বিভিন্ন ৬ জেলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কুমিল্লায় তিনজন, ভোলায় দুজন, সিরাজগঞ্জে দুজন, নড়াইল, শরীয়তপুর ও বরগুনায় একজন করে মোট ১০ জন নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে ৬ লাখ মানুষকে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেশাখালে গাছ উপড়ে একই পরিবারের ৩ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হেশাখাল ইউনিনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার মজুমদার। নিহতরা হলেন, ওই এলাকার নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী সাথি আক্তার ও কন্যাশিশু লিজা।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্বমোহন ও শিল্পপার্কের মাঝখানে যমুনা নদীর ক্যানেলে সিত্রাংয়ের প্রভাবে নৌকা ডুবে মা ও ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পূর্বমোহনপুর বাড়ি যাওয়ার পথে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত নয়টার দিকে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, পূর্বমোহনপুর গ্রামের খোকনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাশন এবং নড়াইলের লোহাগড়ায় গাছ ভেঙে দুইজনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরগুনার সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকার আমেনা খাতুন নামের শতবর্ষী এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে তার ঘরের ওপর গাছ পড়লে ভেতরে চাপা পড়ে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে বরগুনার সোনাখালী এলাকার সমাজকর্মী এনামুল হক ওরফে শাহীন বলেন,ঘূর্ণিঝড়ে তাঁদের এলাকায় নিহত আমেনা খাতুনের বয়স ১০০ বছরের বেশি।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে ঘরের ওপর গাছ পড়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় সাফিয়া খাতুন (৬৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহেল।
ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে বলে লোহাগড়া থানার ওসি মো. নাসির উদ্দীন জানান। নিহত মর্জিনা বেগম (৪০) বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকা অন্যান্য স্থান থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ না থাকায় টেলিযোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এসময় মানুষের মাঝে দুর্ভোগ ও আতঙ্ক দেখা দেয়। অন্যদিকে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে সোমবার বিকেল থেকে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। উপকূলের ১৫টি জেলার নদ–নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতা নিয়ে আছড়ে পড়ে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সোমবার দিবাগত রাতেই ঘূর্ণিঝড়টি রাজধানীর ওপর দিয়ে সিলেট হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এ সময় এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উপকূলসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলসহ দেশের ১৫টি উপকূলীয় জেলাকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।