পঞ্চগড়ের বোদায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় আরও সাত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহবুবুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার ভাটিতে দেবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দুটি এবং আরও ৩৫ কিলোমিটার ভাটিতে দিনাজপুরের খানসামা ফায়ার সার্ভিস দল করতোয়ার জিয়া ব্রিজের কাছে আরও এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের কাছাকাছি জালিয়াপাড়া এলাকা থেকে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পরে আরও তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কান্তি রায় বলেন, ভোর ৬টা থেকে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহীর তিনটি ডুবুরি ইউনিট উদ্ধার কাজ করছে। ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে। অতীত অভিজ্ঞতা ও নদীর প্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে, ভুক্তভোগীদের কেউ দুর্ঘটনাস্থলে নেই। তারপরও প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে এ ঘটনায় জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। তথ্যকেন্দ্রের তথ্য মতে, প্রতিনিয়ত নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এখনও ৬৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় মৃত ২৫ জনের নাম ও পরিচয় জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও পাঁচ পুরুষ রয়েছেন। তাদের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা, দেবীগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলায়।
নিহতরা হলেন-শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), অমলকৃষ্ণ (৩৫), শোভারানী (২৭), দিপংকর(৩), পিয়ন্ত(২.৫), রুপালী ওরফে খুকিরানী (৩৫), প্রমীলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুচিত্রা রানী (৫৭), ফাল্গুনী (৫০), প্রমিলা দেবী (৭০), জোতিষ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৪), সোনেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০) হাতেম আলী (৭০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি, উশাশী (০৮), তনুশ্রী (০৫), শ্রেয়শী, প্রিয়ন্তী(৮), বিঞ্চু(৩.৫), ব্রজেন্দ্রনাথ (৫৫)।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট সোমবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে নদীতে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে নতুন করে কোনও মরদেহ উদ্ধার হয়নি। নদীর ওই অংশে পানির তীব্র স্রোত লক্ষ করা গেছে।
এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে নদীতীরে অপেক্ষমাণ স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে সনাতন ধর্মালম্বীদের শুভ মহালয়া উপলক্ষে রবিবার বিকালে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকা দিয়ে নদী পার হয়ে পূজা আর্চনায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ভক্তরা। ঘাট থেকে নৌকাটি কিছুদূর যাওয়ার পর দুলতে থাকে। এসময় মাঝি নৌকাটি ঘাটে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নৌকা ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীদের অনেকেই সাঁতরে তীরে উঠেন। তবে নৌকার বেশিরভাগ যাত্রী নারী ও শিশু হওয়ায় তারা নদীতে ডুবে যায়। পরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে উদ্ধারকাজে যোগ দেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ২০ হাজার টাকা ও আহতদের ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।