শুধুমাত্র উৎপাদক ও আমদানিকারকদের জন্য মোবাইল ফোনে বিজয় কি-বোর্ড অ্যাপ রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; ব্যবহারকারীরা চাইলে এই অ্যাপ মুছে ফেলতে পারেন বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন।
আজ বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
উৎপাদক ও আমদানিকারকদের জন্য মোবাইল ফোনে বিজয় অ্যান্ড্রয়েড প্যাকেজ কিট (এপিকে) প্রি-ইন্সটল অর্থাৎ বিক্রির আগে ইন্সটল করা বাধ্যতামূলক করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দেওয়া এই নির্দেশনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
প্রতিযোগিতা আইনের লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরে এই নির্দেশনা সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহার চেয়ে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) কমিশনকের আইনি নোটিস দিয়েছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
এই প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আইনের বিষয়, এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমি একটা ব্যাখ্যা দিতে পারি। বিটিআরসি তাদের নির্দেশনায় একটি শব্দ ব্যবহার করেছে-‘বাধ্যতামূলক’। এই শব্দটি বিভ্রান্তিকর। ফোনে আপনি কোনো সফটওয়্যার বা অ্যাপ রাখতে পারেন, ইনস্টল করতে পারেন, ফেলে দিতে পারেন, নতুন করে ইনস্টল করতে পারেন। অতএব বিজয় কিবোর্ড বাধ্যতামূলক নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজয় কিবোর্ড উৎপাদক ও আমদানিকারকদের জন্য মোবাইল ফোনে রাখা বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে। যেন তাঁরা মানুষকে বাংলা লেখার সুবিধা তৈরি করে দিতে একটি অ্যাপ দেন। ব্যবহারকারী তা ব্যবহার করবে কি, করবে না, রাখবে না আনইন্সটল করবে সেটি সম্পূর্ণ ব্যবহারকারীর এখতিয়ার।’
সব অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কি-বোর্ড প্রি–ইনস্টলড থাকা বাধ্যতামূলক করে গত ১৩ জানুয়ারি নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। তাতে বিজয় কি-বোর্ডের প্যাকেজ কিট (এপিকে) ইনস্টল করা ছাড়া কোনো স্মার্টফোন বাজারজাত করার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। বিজয় কি–বোর্ডের পেটেন্ট কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক মোস্তাফা জব্বারের নামে। তিনি সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব এই বিজয় কি–বোর্ড ইস্যুতে।
সমালোচনার মুখে মন্ত্রী এর আগে বলেছেন, মোবাইলে বাংলা ব্যবহারে সরকারের পক্ষ থেকে এটি জনগণের প্রতি উপহার। তবে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীর মালিকানাধীন অ্যাপ ইনস্টল করে দেওয়াকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অনেকেই।
প্রযুক্তিবিদেরা বলছেন, ফোনে কেনার আগেই বিজয় ইনস্টল করা থাকলে ওই অ্যাপে কোন কোন বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা তো ব্যবহারকারী জানতে পারবেন না। এর মাধ্যমে চাইলে ফোনের সব তথ্যই হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, মন্ত্রী কি এটা সরকারের কাছে বিক্রি করেছেন, তাহলে কত টাকায়?
এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে নোটিস পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আইনি ব্যবস্থা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিটিআরসির এই নোটিস প্রতিযোগিতা আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
নোটিসে বলা হয়, যেহেতু বিআরটিসির এ ধরনের নির্দেশনা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত এবং এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আদৌ ক্ষমতাপ্রাপ্ত নয়। তাছাড়া এ অ্যাপটির ইনস্টলেশন বিনামূল্য হলেও অ্যাপটি ইনস্টল করতে হলে গুগলের মাধ্যমে করতে হয়, যা প্রকৃতপক্ষে বিনামূল্যে নয়।
এতে আরও বলা হয়, যেহেতু ওই নোটিসের বাধ্যবাধকতা একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দেয়। এ কারণে বিটিআরসির নির্দেশনা প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং একই আইনের ২৪ ধারা অনুসারে শান্তিযোগ্য অপরাধ বটে।
এসব বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নির্দেশনাটি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান নোটিসকারী আইনজীবী।
গত ১৩ জানুয়ারি বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়, আমদানিকরা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলফোনে বিজয় অ্যান্ড্রয়েড প্যাকেজ কিট (এপিকে) ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। বিটিআরসির কাজী মো. আহসানুল হাবীব মিথুনের সই করা নির্দেশনায় এ কথা জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলফোনে বিজয় কি-বোর্ড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমদানিকরা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলফোনে বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল ব্যবহারের লক্ষ্যে কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল সরবরাহ করা হবে। এ লক্ষ্যে পত্র জারির ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক, দিদারুল ইসলামের কাছ থেকে বর্ণিত বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইলটি সংগ্রহ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।